ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে তালা : ক্লাস বর্জন

Exif_JPEG_420

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া ::   কক্সবাজারের চকরিয়ায় বহদ্দার কাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অপসারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে অধ্যায়নত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে শ্রেণিকক্ষে এবং অফিসকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিনাত সোলতানাকে অপসারণ করা না হলে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দার কাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবক মহল জানান, বিএমচর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এ বহদ্দার কাটা উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছেন কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলম। তার সুদক্ষ পরিচালনায় বিদ্যালয়টি শিক্ষা,সংস্কৃতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরণের ন্যাক্কার জনক ঘটনা করবে তা আমরা কখনও ভাবেনি। কতিপয় কুচক্রিমহল ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্ররোচনায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মূলত এ কাজটি করেছে। শিক্ষার্থীদের কাজ হলো পড়া লেখা করা, আন্দোলন করা নয়। যে সব ব্যক্তি এ কাজে ছাত্রদের ব্যবহার করেছে তারা কোনদিন প্রতিষ্টানের মঙ্গল চাই না। তারা বলেন, মূলত প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় শিক্ষক বেশি থাকায় আজকে দৈন্যদশা পরিণত হয়েছে। আমরা চাই ভালো পাঠদান দিয়ে অতীতের মতো বিদ্যালয়ের সুষ্টু সুন্দর পড়া-লেখার পরিবেশ তৈরি করা হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত দশম শ্রেণীর বেশকজন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। ক্লাসে পাঠদানও দেয় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন না। এমন কি আমাদের সাথেও ভালো আচরণ না করে ভয় দেখিয়ে অশালীন ব্যবহার করে। এ ধরনের কর্মকা-ের ফলে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলায় পূবের চেয়ে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে এ বিদ্যালয় থেকে। তারা আরো বলেন, নিজের স্বপদে বহাল থাকার জন্য এতোদিন পার হওয়ার পরও কেন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছেনা বিষয়টি আমাদের বোধগম্য হওয়ায় আজকে তার বিরুদ্ধে অপসারণ চেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন। আমরা চাই দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হোক। শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এবং প্রধান শিক্ষকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি মাষ্ঠার নুর মোহাম্মদ ও রফিক উদ্দিন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে রেজুলেশন আকারে ২০১৮ সালে ১অক্টোবর প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জিনাত সোলতানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শিক্ষকদের প্রতি তার আচার-আচরণ ভিন্ন হয়ে যায়। যেটা আমরা কখনও কাম্য করিনি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর তিনি অদ্যবদি প্রধান শিক্ষক শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়াগত কোন সুরাহা না করে দিনের পর দিন কালক্ষেপন করে যাচ্ছে। এরই ফলে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি ও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যথেষ্ট ব্যহত হচ্ছে। যার ফলে আজকে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন করার সুযোগ পেয়েছে। স্কুলে তালা লাগানোর ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্কিত একটি ঘটনা। এ জন্য আমরাও লজ্জিত। শিক্ষার্থীদের শত বাঁধা দেয়ার পরও তাদের রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিনাত সোলতানা অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির লোকজন ও শিক্ষকরা কোমলমতি শিশুদের ভুল বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করাচ্ছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম স্যারের নির্দেশনা বাইরে আমার যাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তালা লাগানোর ঘটনাটি শোনা মাত্রই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করি। পরে এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ব্যাপারে আশ্বাস্থ করলে তারা তালা খুলে দেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস্থ করেছেন বলে জানান।##

পাঠকের মতামত: